দেবীপক্ষের ‘না নিষাদ’

পিতৃ পক্ষের অবসানের শারদ আকাশের দ্বি-পক্ষ বিশিষ্ট কৃষ্ণপক্ষের অবসানে আমাবস্যায় বেজে ওঠে আলোক মঞ্জুরী। পিতৃপক্ষ শেষ। শুরু হয় দেবীপক্ষের প্রাণের সঞ্চার। স্থলচর-জলচর-উভয়চরে তৃষ্ণার্ত আত্মারা পায় উত্তর পুরুষের হাতের জল। শক্তি সঞ্চারিনী মা দুর্গার আগমনে চরাচর ভেসে যায় আনন্দের উদ্বেল মুহূর্তে। কথিত আছে, প্রতিবছর মা কীসে আসবেন বা কোন বাহনে তার আগমন ও প্রস্থান এই মহালয়ার শুভ মুহূর্তে তা নির্দিষ্ট হয়। গঙ্গায় স্নান করে পিতৃপুরুষের তর্পণ ওইদিন করা হয়। পুরানে কথিত আছে দন্ড ও মুণ্ড এই দুই অসুরের দাপটে দেবলোক যখন ছারখার হয়ে যাচ্ছে তখন মা দুর্গা মহালয়ার পূর্ণ তিথিতেই চামুন্ডা রূপ ধরেনতাঁর কপাল নির্গত ব্রহ্মতেজের দ্বারা এই দুই অসীম শক্তিশালী অসুরকে বধ করেন। মার্কণ্ডেয় পুরানে বলেছে – ‘সর্ব মঙ্গল্য মঙ্গল্যে, শিবে সর্বার্থ সাধিকে, শরণ্যে ‌ত্রম্বকে গৌরী, নারায়নী নমস্তুতে।’

দৈত্য গুরু শুক্রাচার্যের বীভৎস প্রতিহিংসায় অসুরকুল যখন দেবলোকে আক্রমণ করে তখন বিভিন্ন দেবতাদের অস্ত্রের দ্বারা সজ্জিত হয়ে দেবী দুর্গা শক্তিরূপিনী আকার ধারণ করে অসুর নিধন করেন।

দেবীপক্ষ আর পিতৃপক্ষের আবর্তে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর প্রজাপতি প্রভৃতি ঈশ্বরগণ ঋষি কুমারদের শুক্লপক্ষের প্রতি পদে সংগীত দ্বারা নবরাত্রির সূচনা করেন। বৈদিক মতে নবরাত্রি চলে নয় দিন। এই নয় দিনই তান্ত্রিক আঁধারের ওপর দাঁড়িয়ে সপরিবারে পুজিত হন জগৎ জননী। পুরানে বলেছে-

“গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং যত্রদেব মহেশ্বর।
সম্বসরে ব্যতীত তু পুনরাগমনায়চ”

ঋতু আসে ঋতু যায় বিনাশ আসে-প্রাণের সঞ্চার হয় প্রকৃতির পাতায় পাতায় ছত্রে ছত্রে বেজে উঠে আলোক মঞ্জুরীর তীব্র প্রাণের আহ্বান। 

তাইতো উপনিষদ বলছে- না নিষাদ প্রাণে ছত্রে শোনিতে না নিষাদ।